মধুখালীতে মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপ, আহত ১৩

বিশেষ প্রতিবেদক। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন সন্দেহে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। প্রায় ৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ৩টার পর মহাসড়ক থেকে গাছের গুড়ি ও জ্বলন্ত টায়ার অপসারণ করার পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
জানা যায়, মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মধুখালী রেলগেটে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়। স্থানীয় সর্বসাধারণের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচি পালনে সেখানে জনতা সমবেত হতে থাকলে পুলিশ তাদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সমবেতরা একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে মহাসড়কের মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, কামারখালী ব্রিজের অদূরে মাঝিবাড়িতে ও বাগাটের ঘোপঘাটসহ বিভিন্নস্থানে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে হটিয়ে দিতে গেলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। সকাল ১০ টা থেকে তারা মহাসড়কের মধুখালী পৌরসদরের মরিচ বাজার থেকে আড়কান্দি ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বিভিন্ন স্থানে গাছের গুড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে।
খবর পেয়ে মধুখালী থানার পুলিশের সাথে ফরিদপুর থেকে এপিবিএন, র‌্যাব ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। কিছুক্ষণ পরেই ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বিক্ষোভকারীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। বিক্ষোভকারীরা তাদের উপর পুলিশের গুলি ও হামলার প্রতিবাদ জানায়। জেলা প্রশাসক এ ঘটনার তদন্ত হবে বলে আম্বাস দেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা জেলা প্রশাসকের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় পরে অতিরিক্ত পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর সোয়া ২টার দিকে প্রথমে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হলে আবার মরিচের বাজারে মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। এ সময় আড়কান্দিতে পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি রাস্তা থেকে গাছের গুড়ি সরিয়ে যান চলাচল করতে গেলে সেখানে মহাসড়কের ঢালে লুকিয়ে থাকা বিক্ষুব্ধরা ঢিল ছুঁড়তে থাকে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে হটিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতার মানববন্ধনের কারণে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কে উঠে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে গাছের গুড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ১৩ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন শর্টগানের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এ সময় কয়েকজন পুলিশও ইটপাটকেলে আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, বামুন্দি গ্রামের আজিম মোল্লা, কুড়ানিয়ারচর গ্রামের মতিউর রহমান, চরশ্রীরামকান্দি গ্রামের শাহীন মৃধা ও মনির মিয়া, ঘোপঘাট গ্রামের বাপ্পি খান, কাটাখালী গ্রামের নাঈম মোল্লা, উজানদিয়া গ্রামের সোহেল, বাগাট গ্রামের শিরিনা বেগম এবং পুলিশ সদস্য এপিবিএনের আহত হলেন, ইব্রাহিম, ফয়জুর, ওসমানুর রহমান, মাহমুদুল। আহতদের উদ্ধার করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে ১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানানন্তর করেন।
এ ব্যাপারে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজ হোসেন বলেন, পঞ্চপল্লীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহাসড়কের মধুখালী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে নওপাড়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। কোথায় বুঝিয়ে শুনিয়ে কোথাও টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ এমদাদ হুসাইন বলেন, কোথাও বুঝিয়ে এবং কোতাও শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে এ ঘটনায় কোন ব্যক্তি হতাহত বা যানমালের ক্ষতি সাধানের কোন ঘটনা ঘটেনি।

%d