ফরিদপুরে নানা হিসাব নিকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রার্থীরা

কামরুজ্জামান সোহেল।
বিগত দিনের যে কোন সময়ের উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে ফরিদপুরে। নানা নাটকীয়তা আর পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জ, পাল্টা চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে আওয়ামীলীগের দুটি গ্রুপের নেতা-কর্মীরা নেমেছেন প্রচারনায়। আগামী ৮ মে প্রথম দফায় ফরিদপুরের তিনটি উপজেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এবারের নির্বাচন বিগত দিনের নির্বাচন ছাপিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের তরফ থেকে নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন না দিলেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে সমর্থন করছেন প্রার্থীদের। আর আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র এমপিরাও তাদের প্রার্থীদের সমর্থন করায় নির্বাচনী মাঠ বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দেশব্যাপী আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলার দুই আসামী যেমন প্রার্থী হয়েছেন। তেমনি বর্তমান তিন উপজেলা চেয়ারম্যানও প্রার্থী হতে পারেননি (যদিও একজন আদালতের নির্দেশে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন)। এসব নিয়ে সরব আলোচনা-সমালোচনা চলছে ভোটারদের মাঝে। প্রতিক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা উঠান বৈঠক, গনসংযোগ আর প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ফরিদপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। তাদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের চাপের কারনেই তিনি তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামীলীগের সমর্থন রয়েছে, দলের কোতয়ালী থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলম চৌধুরীর (আনারস প্রতিক) দিকে। অন্যদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ঈমান আলী মোল্লা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যুব মহিলা লীগের আহবায়ক রুখসানা আহমেদ মেহেবীর প্রতি। অন্যদিকে, ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি আব্দুল কাদের আজাদের সমর্থন রয়েছে চেয়ারম্যান পদে শহর আওয়ামীলীগের সাবেক আহবায়ক মনিরুল হাসান মিঠু (টেলিফোন প্রতিক)। মনিরুল হাসান মিঠুর প্রার্থীতা বাতিল হলেও তিনি আদালতের আদেমে প্রার্থীতা ফিরে পান। ভাইস চেয়ারম্যান পদে রুকসুর সাবেক ভিপি মনিরুজ্জামান মনির ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ডা. মাসুদা বেগম বুলু। ফরিদপুর সদর উপজেলায় অন্য যারা প্রার্থী রয়েছেন তারা হলেন, গোলাম রব্বানী খাঁন মুন (দোয়াত কলম), কোতয়ালী বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রউফ-উন নবী (হেলিকপ্টার), কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফকির মোঃ বেলায়েত হোসেন (মোটর সাইকেল), কে এম নাজমুল ইসলাম (কাপ পিরিচ)।
চরভদ্রাসন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান কাউসার আলী মোল্লা প্রার্থী হননি। সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র এমপির লোক হিসাবে পরিচিত কাউসার আলী মোল্লাকে বসিয়ে দিয়ে তার আরেক সমর্থক আনোয়ার আলী মোল্লাকে (আনারস প্রতিক) সমর্থন জানানো হয়। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ’র সমর্থন রয়েছে মোতালেব হোসেন মোল্লার (দোয়াত কলম প্রতিক) প্রতি। এছাড়া প্রার্থী রয়েছেন, বিএনপির সমর্থক ফারুক হোসেন মৃধা (হেলিকপ্টার), মোঃ খবির উদ্দিন শেখ (মোটর সাইকেল), সৈয়দ নিজামউদ্দিন আহমেদ (টেলিফোন)। এ উপজেলায় ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস দিয়েছে স্থানীয় ভোটারেরা।
মধুখালী উপজেলায় মোট প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। এদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম মনোনয়নপত্র বাছাইকালে বাতিল হয়। পরবর্তীতে তিনি আপিল করলেও সেখানেই তার প্রার্থীরা ফিরে পাননি। তবে আদালতের দারস্থ হলে শেষ মুহুর্তে প্রার্থীতা ফিরে পান তিনি। এ উপজেলায় আওয়ামীলীগের পছন্ন সমর্থন রয়েছে শহিদুল ইসলামের (হেলিকপ্টার প্রতিক) প্রতি। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগের বড় একটি অংশ এমপি বিরোধীরা সমর্থন করছেন মির্জা আহসানুজ্জামান আজাউলের (ঘোড়া প্রতিক) প্রতি। এ উপজেলায় অন্য যারা প্রার্থী রয়েছেন তারা হলেন, কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক (আনারস), বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির মধুখালী উপজেলার সম্পাদক আবু সাইদ মিয়া (মোটর সাইকেল), মোহাম্মদ মুরাদুজ্জামান (দোয়াত কলম) । এ উপজেলায় এবার ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলেছে।

%d