কামরুজ্জামান সোহেল #
ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়ার পরাজয়কে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হিসাবে দেখছেন এ আসনের আওয়ামীলীগের বেশীর ভাগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারেরা। এজন্য তারা স্থানীয় কয়েক আওয়ামীলীগ নেতার গভীর ষড়যন্ত্র এবং প্রশাসনকে দায়ী করেন। ভোটের দিন সন্ধ্যার পর জেলা রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে পাওয়া ১১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টি কেন্দ্রের ফলাফলে জামাল হোসেন মিয়াকে ৭১ হাজার ৬০১ ভোট দেখানো হয়। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগ প্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীকে ৫৯ হাজার ৮৫৩ ভোট দেখানো হয়। কিন্ত বাকি কেন্দ্রে গুলোর ফলাফল আটকে রেখে তিন ঘন্টা পর জামাল হোসেন মিয়াকে ১৯০০ ভোটে হার দেখানো হয়। আর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে ফরিদপুর-২ আসনের মানুষের মাঝে। নির্বাচনের পর ফলাফল প্রত্যাখ্যান ও কয়েকটি কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচনের দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া। নির্বাচনের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ও পুনরায় নির্বাচন চেয়ে জামাল হোসেন মিয়া নির্বাচন কমিশন এবং রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে আপিল করেছেন।
সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে এ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়াকে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত দেখানো হয়। জয়ী দেখানো হয় আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীকে। স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ফরিদপুর-২ আসনে বিপুল জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসাবে সকলের কাছে সমাদৃত ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া। নগরকান্দা-সালথা উপজেলার বেশীর ভাগ আওয়ামীলীগ নেতা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারগন ও গ্রাম্য মাতুব্বরেরা ছিলেন জামাল মিয়ার পক্ষে। ফলে ভোটের আগে থেকেই গনজোয়ার সৃষ্টি হয় জামাল মিয়ার পক্ষে। ভোটের দিন সকাল তেকে দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ন পরিবেশে ভোট গ্রহন চলে। কিন্তু দুপুরের পর থেকে সালথা উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট পড়ার অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া ও তার এজেন্টগন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের কোন কথাই শোনেননি প্রিজাইডিং অফিসার। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেনের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। এমনকি কয়েকটি কেন্দ্রে ফলাফল সীটে স্বতন্ত্র প্রার্থী এজেন্টদের সাক্ষর না থাকলেও সেই রেজাল্ট সিট গননায় ধরা হয়েছে। নির্বাচনের সময় এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও তার কোন ব্যবস্থা নেননি সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা। নির্বাচনের পর দিন ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জামাল হোসেন মিয়া। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, ফরিদপুর-২ আসনের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী ও তার অনুসারী সন্ত্রাসী কর্তৃক ভোটে অনিয়ম, কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা এবং পোলিং এজেন্টদের সাক্ষরবিহিন রেজাল্ট সিট তৈরীর অভিযোগ আনেন। এসময় তিনি বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে তার কাছে তথ্য প্রমান রয়েছে। এদিকে, স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজসে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তাকে হারানো হয়েছে বলে দাবী করে জামাল হোসেন মিয়া নির্বাচন কমিশন ও জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে পুনরায় ভোট চেয়ে আপিল করেছেন। আপিল আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে থেকে ঈগল প্রতিকের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। প্রিজাইডিং অফিসারের সহযোগীতায় নৌকা প্রতিকের সমর্থকেরা প্রকাশ্যে নৌকা প্রতিকে সিল মারেন। মৃত ও প্রবাসী অনুপস্থিত ভোটারদের সকল ভোট নৌকা প্রতিকে নিয়ে নেয়। কাইচাইল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ক কেন্দ্র হতে নৌকা প্রতিকের সন্ত্রাসীরা পোলিং অফিসার অসীম শেখকে মারধোর করে ভোটার লিষ্ট ছিনতাই করে নিয়ে যায়। যার কারনে সেখানে দুই ঘন্টা ভোট গ্রহন বন্ধ থাকে এবং ব্যালপ পেপার ছিনতাই করে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ফেলে। এছাড়া বেশ কিছু কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টদের মারধোর করে বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার নিয়ে নৌকায় সিল মারে। জামাল হোসেন মিয়া আবেদনে আরো জানান, এসব বিষয় নিয়ে দায়িত্বরত ম্যাজিষ্ট্রেট ও প্রিজাইডিং অফিসারকে বারবার বলা হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। নগরকান্দা উপজেলার গোয়ালপোতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্য কাইচাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সালথা উপজেলার নারানদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বল্লভদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টদের সাক্ষর ছাড়া নিজেদের মতো রেজাল্ট সিট তৈরী করে স্থানীয় প্রশাসন। সালথা উপজেলার সহকারী রিটানিং অফিসার কন্টোল রুমে না গিয়ে তার অফিসে বসে নেটওয়ার্ক নেই বলে অজুহাত দেখিয়ে কেন্দ্র ভিক্তিক ফলাফল জনসম্মুখে ঘোষনা না করে প্রায় দুই ঘন্টা আমাকে বসিয়ে রেখে ইচ্ছেমতো নৌকা প্রতিকের পক্ষে রেজাল্ট সিট তৈরী করে আমার নিকট রেজাল্ট সিট ধরিয়ে দেয়। যা সম্পূর্ন আইন বহিভূত।
এদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।