আলহাজ্ব আবদুল খালেক ডিগ্রি কলেজের তিন শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার

বিশেষ প্রতিবেদক
ফরিদপুর শহরতলীর গেরদা ইউনিয়নের খালেক চেয়ারম্যানের বাজারে অবস্থিত ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব আবদুল খালেক ডিগ্রি কলেজের তিন শিক্ষককে সাময়িক ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও শৃঙ্খলাভঙ্গসহ কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সাময়িক ভাবে বরখাস্তকৃত তিন শিক্ষক হলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক মোঃ সাহেব আলী, ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মোঃ ইকবাল হোসেন ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মোঃ মনজুর হোসেন।
প্রাপ্ত অভিযোগ, কলেজ কতৃপক্ষ, কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কলেজের স্বার্থবিরোধী নানা কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন তিন শিক্ষক মোঃ সাহেব আলী, মোঃ ইকবাল হোসেন ও মোঃ মনজুর হোসেন। একাধিক বার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মৌখিক ও লিখিত ভাবে তাদের বিষয়টি জানানো হলেও তারা তাতে কোন কর্ণপাত না করে কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট করা সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। কলেজের ভাবমূর্তি ও সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে কলেজ কতৃপক্ষ গভনিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে বিগত ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর কারন দর্শানো নোটিশ প্রেরন করে। কিন্তু তারা তিনজনই সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। পরবর্তীতে ২য় দফায় তাদের কারন দর্শানে নোটিশ প্রদান করতে কতৃপক্ষ সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে ফের কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুমা খাতুন স্বাক্ষরিত ৩য় দফায় গত ১০ ডিসেম্বর কারন দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয় এবং এহেন কর্মকান্ড এবং আচরন গুরুতর পেশাগত আসদাচরন যা কলেজের স্বার্থ ও শৃঙ্খলার পরিপন্থি বিধায় উল্লিখিত াভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত-২০১৯) অনুযায়ী কেন আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না মর্মে পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্য দিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। নোটিশে আনিত অভিযোগ গুলোর মধ্যে ছিল, ১. কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফারুক মিঞার দায়িত্ব হস্তান্তর প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক স্বাক্ষরিত স্মারকে কলেজের সভাপতি বরাবরে পত্র প্রেরন করেন এবং কি প্রক্রিয়ায় করতে হবে তাও উল্লেখ করে দেন। গভর্র্নিং বডি সেই নিয়মে অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পণ করেন। কিন্তু আপনি গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তকে নিয়ম বহির্ভূত অভিযোগ করা এবং সভাপতির দায়িত্বের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন। ২. আপনি কলেজ গভর্নিং বডির সকল সদস্যের সভার সিদ্ধান্তকে অমান্য করা। ৩. প্রত্যেক সভায় আপনি উচ্চস্বরে বক্তব্য প্রদান করেন। কখনো কোন শিক্ষক ক্রন্দন করে বক্তব্য দেননি বা আপনি দেননি। কিন্তু শিক্ষকদের ক্রন্দন এর বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করা। ৪. বিধি অনুযায়ী নির্বাচিত গভর্নিং বডি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক অনুমোদিত কমিটিকে নিয়ম বহির্ভূত কমিটি বলে অভিযোগ করা। ৫. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক অনুমোদিত কমিটি বাতিল চেয়ে বিভিন্ন আবেদন ও অভিযোগ করা। ৬. কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চলমান নিয়মিত গভর্নিং বডি/এডহক কমিটিকে পকেট কমিটি বলে মনে করা। ৭. ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উস্কানীমূলক কথা বলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। ৮. ডিগ্রি শাখার জন্য এন.টি.আর.সি সার্টিফিকেট ধারী নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষককে ২২০০/- টাকার শিক্ষক বলে মন্তব্য করে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং করা। ৯. কলেজ প্রতিষ্ঠাতাদের ও সাবেক অধ্যক্ষ সর্ম্পকে কুরুচিপূর্ন ও খালেক পরিবারকে প্রতিপক্ষ বরে মন্তব্য করা ১০. কলেজের ল্যাপটব নিয়ে পত্রিকায়, ফেসবুকে তথ্য প্রচার করা ও শিক্ষা অপিস বরাবরে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ১১. কম্পিউটার ল্যাবের আই.পি.এস এর ব্যাটারী নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর তদন্ত কর্মকর্তার নিকট মিথ্যা তথ্য দেওয়া ১২. প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আত্বীয়-স্বজন দিয়ে পকেট কমিটি করা বলে মিথ্যা অভিযোগ করা ১৩. বিভিন্ন জাতীয় দিবসে উপাধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত অনুপস্থিত থাকেন বলে মিথ্য অভিযোগ করা ১৪. একজন শিক্ষক হয়ে অন্য একজন নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষককের বেতনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাবেক অধ্যাক্ষের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করা ১৫. উপাধ্যক্ষ পদ নেই এবং নিয়ম বহির্ভূত ভাবে উপাধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্তকে দায়িত্ব দেওয়া ও অবৈধ উপাধ্যক্ষ বলে অভিযোগ করা ১৬. উপাধ্যক্ষ পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। উপাধ্যক্ষের নিয়োগ নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করা। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ আনা হয় অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বারবার নোটিশ প্রদানের পরও অভিযুক্ত তিন শিক্ষক সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় তাদেরকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। ২১ জানুয়ারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুমা বেগম স্বাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তের চিঠিতে বলা হয়, গভর্নিং বডির গত ২০ জানুয়ারির সভায় আপনার অভিযোগনামার জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত হয়নি। সভার সিদ্ধান্তক্রমে আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আপনাকে চাকুরী হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
আলহাজ্ব আবদুল খালেক ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও খালেক চেয়ারম্যানের জ্যেষ্ঠপুত্র, গেরদা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আরিফ হোসেন জানান, কতিপয় শিক্ষক কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। যা নিন্দনীয়। যারা কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাই।
এ বিষয়ে সাময়িক বরখাস্তকৃত শিক্ষক মোঃ মনজুর হোসেন বলেন, আমরা তিন শিক্ষক কলেজের দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ দেই। এ কারনে কলেজ কতৃপক্ষ ও গভর্নিং বডি আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে। এ বিষয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নেবো।

%d