বুয়েট শিক্ষার্থী লামিয়ার শেষ কথা ‘বাবা আমাকে বাঁচাও’

বিশেষ প্রতিবেদক।
‘বাবা আমি আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছি, তারাতারি আমাকে উদ্ধার করো’- এই ছিল বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলামের শেষ কথা। পরবর্তীতে পরিবারের পক্ষ থেকে লামিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। মা হারা লামিয়াকে উদ্ধারে তার বাবা পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম শামীম নানা চেষ্টা করেও মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি। শুক্রবার ভোরে লামিয়ার নিথর দেহ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। এসময় পরিবারের অন্য সদস্যরা শোকে নির্বাক হয়ে যান। লামিয়ার বাবা নাসিরুল ইসলাম সুমন শোকে পাথর হয়ে গেছেন। তিনি কোন কথাই বলতে পারছেন না। লামিয়ার মায়ের আশা ছিল তার মেয়ে বড় হয়ে দেশের জন্য কিছু করবে। মায়ের ইচ্ছাতেই সে বুয়েটে ভর্তি হয়। কিন্তু মায়ের সে আশা আর পূরন হলো না।
ঢাকার বেইলী রোডে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া বুয়েটের শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলাম এর বাড়ী ফরিদপুরে এখনো চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে লামিয়ার লাশ শহরের দক্ষিন ঝিলটুলীর বাড়ীতে এসে পৌছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। লামিয়ার স্বজনেরা লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। লামিয়ার লাশ দেখতে স্থানীয় প্রতিবেশীরাও ভীড় জমান। ঢাকার বেইলী রোডে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া বুয়েট শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। বাদ জুম্মা শহরের চকবাজার জামে মসজিদে লামিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পুলিশ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ নেন। পরে লামিয়াকে ফরিদপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
লামিয়ার চাচা রফিকুল ইসলাম সুমন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মগবাজারের পুলিশ কোয়ার্টারের বাসা থেকে বান্ধবীকে নিয়ে খাবার খেতে কাচ্চি ভাই রেষ্টুরেন্টে যায় লামিয়া। রাতে আগুন লাগার পর লামিয়া তার বাবার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে, সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছে। তারাতারি তাকে উদ্ধার কথা জানায়। পরে পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেও তাকে ফোনে পায়নি। ভবনের ভেতরে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে বান্ধবীসহ সে মারা যায়। তিনি আরো বলেন, তার ভাস্তি অত্যান্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তাদের পরিবারের অনেক আশা ছিল লামিয়াকে নিয়ে। মা হারা লামিয়া সংসারের সব বিষয়ে দেখাশোনা করতো। একটি দুর্ঘটনায় পরিবারের সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
নিহত লামিয়া ইসলাম বুয়েটের ম্যাকানিক্যাল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তারা বাবা নাসিরুল ইসলাম শামীম পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি পদে কর্মরত রয়েছেন। নাসিরুল ইসলাম শামীমএর দুই কন্যার মধ্যে লামিয়া ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। লামিয়ার মা ২০১৫ সালে মারা যায়।

%d