আলোচিত দুই ভাইসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জসিট গ্রহন করেছে আদালত

বিশেষ প্রতিবেদক/
দুই হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচারের মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত।
এছাড়া ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কে›ন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। অপর দিকে পলাতক থাকায় ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোসসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন সিআইডির দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করেন।
এ মামলায় জামিনে রয়েছেন খন্দকার নাজমুল হাসান লেভী, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইন,খন্দকার মোহাতেশাম হোসেন বাবর, আসিবুর রহমান ফারহান, কামরুল হাসান ডেভিড, আরিফুর রহমান দোলন ও তারিকুল ইসলাম নাসিম। এছাড়া জেল হাজতে রয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন বরকত, ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ও এ এইচ এম ফুয়াদ। বাকী ৩৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে ২০২৩ সালের ২২ জুন এ চার্জশিট দাখিল করা হয়। পরে আদালত মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরআগে ২০২১ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা ১০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য ছিল। কিন্তু সেদিন মামলাটিতে কিছু অসঙ্গতি দেখতে পাওয়ায় আদালত সুয়ো মোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) ভাবে সিআইডিকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আপন ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, তার সাবেক এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জী, ফরিদপুর শহর আওয়ামী সাবেক লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, মন্ত্রীর সাবেক এপিএস এএইচএম ফুয়াদ, যুবলীগ নেতা ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম নাসিম।
সম্পূরক চার্জশিটের নতুন আসামিরা হলেন, ছাত্রলীগের সাবেকজ সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম, শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা মো. বিল্লাল হোসেন, যুবলীগ নেতা ও চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক, মো. সাইফুল ইসলাম জীবন, আওয়ামীলীঘ নেতা এডভোকেট অনিমেশ রায়, কোতয়ালী আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা দীপক কুমার মজুমদার, ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ মাহতাব আলী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জি, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম মজনু, কানাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন, ফরিদপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মো. নাছির, শ্রমিক লীগ নেতা মো. জামাল আহমেদ জামাল, বেলায়েত হোসেন মোল্লা, আফজাল হোসেন খান শিপলু, পৌরমেয়র অমিতাভ বোস, যুবলীগ নেতা চৌধুরী মো. হাসান, জাফর ইকবাল হারুন মন্ডল, বরকতের স্ত্রী আফরোজা আক্তার পারভীন, রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরুজ পুনুম, আওয়ামীলীগ নেতা সাহেব সারোয়ার, আমজাদ হোসেন বাবু, স্বপন কুমার পাল, জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহিদ বেপারী, খলিফা কামালউদ্দিন, নাফিজুল হাসান তাপস, রিয়াজ আহমেদ শান্ত, আনোয়ার হোসেন আবু ফকির, মো. মনিরুজ্জামান মামুন, মাহফুজুর রহমান, সুমন সাহা, মো. আব্দুল জলিল শেখ, মো. রফিক মন্ডল, খন্দকার শাহীন আহমেদ ওরফে পান শাহীন, আফজাল হোসেন খান ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হন বরকত ও রুবেল। এছাড়া তারা মাদক কারবারি এবং ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ করেছেন। এসি ও নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রাম ট্রাক, বোল্ডার ও পাজেরো গাড়ির মালিক হয়েছেন। সেই সঙ্গে দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন তারা।

%d