তারেকুলকে দেখেই আনন্দের কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা

বিশেষ প্রতিবেদক।
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর থার্ড অফিসার তারেকুল ইসলামের বাড়ী ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামে। বর্তমানে গ্রামটিতে বইছে আনন্দের জোয়ার। গ্রামে ফিরতেই আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনসহ গ্রামবাসীর অনেকে। বুধবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বড় ভাই হাসানের সঙ্গে মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামের নিজ বাড়ীতে এসে পৌঁছান তারেকুল। এসময় বাড়ীতেতে ঢুকতেই হাসি ফোঁটে ওঠে সকলের মুখে। তারিকুলকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসী।
সরেজমিনে তারেকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ীতে প্রবেশের পরই বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা হাসিনা বেগম বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন সন্তানকে। এ সময় স্ত্রী নুসরাত জাহান জুথীসহ সবার চোখেই ছিল আনন্দাশ্রু। তারেকুল তার দেড় বছর বয়সি একমাত্র কন্যা তানজিহাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন। স্ত্রী জুথীর মুখে তখণ হাসি। স্বামীকে দেখতে পেয়েও কথা বলতে পারছিলনা তার স্ত্রী জুথী। বেশ কিছু সময় অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন তারা।
তারেকুল বাড়ীতে আসার খবর পেয়ে ভোর থেকেই চলছে নানা আয়োজন। তারেকুলের স্ত্রী আগে থেকেই কেক এনে রেখেছেন, তারেকুল আসার পরই সবাই মিলে কেক কাটলেন। এরপর একে অপরকে খাইয়ে দিলেন সে। এছাড়া তৈরি করা হচ্ছিল তারেকুলের পছন্দের চিতই পিঠা, আর মাংস। এছাড়া শোল মাছসহ নানা পদের রান্নাও করেছে তার পরিবার। তারেকুলের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমরাতো এবার ঈদ করতে পারি নাই। আগেই বলেছিলাম, ছেলে যেদিন বাড়ীতে আসবে, সেই দিনই আমাদের ঈদ। আর তাই আজ আমাদের ঈদের দিন। তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেকে কাছে পেয়ে কী যে ভালো লাগছে তা বোঝাতে পারবো না। নামাজ পড়েছি, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। ছেলের পছন্দের বিভিন্ন খাবার রান্না করছি। আত্মীয়-স্বজন, আর পাড়া-প্রতিবেশীরা আসছেন, সবাই আমরা অনেক খুশি।’ ‘দীর্ঘ ৬৫ দিন আমাদের পরিবারে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যখনই ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে তখনই চোখের কোনে পানি এসে যায়।
তারেকুল ইসলাম বলেন, জীবনের ওই কটা দিন স্মরণীয় থাকবে। এখন অনেক ভালো লাগছে। ভেবেছিলাম হয়তো আর কোনদিন কারো সঙ্গে দেখা হবে না। আল্লাহর রহমতে বাবা-মার দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরে এসেছি। আমাদের উদ্ধারে যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুর্বিষহ দিন কেটেছে। কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ। সব সময় আতঙ্কের মধ্যদিয়ে দিন পার করতে হয়েছে। এ রকম দিন যেন কারো জীবনে না আসে। তারপরও সুস্থভাবে বাড়ী ফিরতে পেরেছি, এতেই অনেক ভালো লাগছে।’
তারেকুলের স্ত্রী জুথী বলেন, ‘অনেক খুশি আমি। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তারেকুলের জন্য বিশেষ আয়োজন রয়েছে বাড়ীতে। আজকের দিনটি আমাদের ঈদ।’ দেশবাসীসহ সকলের কাছে দোয়া চাই আমাদের পরিবারের জন্য।
অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে এক মেযের মধ্যে সবার ছোট তারেকুল ইসলাম। ছকড়িকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে চলে যান ঢাকায়। সেখানে মিরপুরের ড. মোঃ শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে যোগ দেন চাকরিতে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে। ভারত মহাসাগর অতিক্রমকালে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েন তিনিসহ ওই জাহাজের সবাই।

%d