সদরপুরে যুবলীগ নেতার কাছে ধরাশায়ী আওয়ামীলীগ নেতা

কামরুজ্জামান সোহেল।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুলের কাছে হার মানলেন দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমান। বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শহিদুল ইসলাম বাবুলের কাছে ৪ হাজার ৪২৫ ভোটের ব্যবধান হার মানেন তিনি। এবারের নির্বাচনে সদরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের দুইজন এবং আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর সমর্থক একজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় কাজী জাফরউল্লাহর সমর্থক মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন দুই নেতা কাজী শফিকুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকেন। নির্বাচনের আগে যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলামের সদরপুরের বাড়ীতে গিয়ে তাকে গাড়ীতে করে নিজ বাড়ী ভাঙ্গায় নিয়ে আসেন সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন। এসময় বাবুলকে নির্বাচন থেকে সরে যাবার ঘোষনা দিতে বলেন। বাবুল সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর কথা মতো ফেসবুক লাইভে এসে কাজী শফিকুর রহমানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাবার ঘোষনা দেন। এ নিয়ে বাবুলের সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সংষদ সদস্যর বাড়ী থেকে নিজ বাড়ী সদরপুরে ফেরার পর বাবুলের কয়েক হাজার সমর্থক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং বাবুলকে তার কথা প্রত্যাহার করার দাবীতে তার বাড়ীর সামনে অবস্থান নেন। বাবুল তার কর্মী-সমর্থকদের কথা চিন্তা করে নির্বাচন করার ঘোষনা দেন। একই সাথে তিনি সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর পক্ষ ত্যাগ করে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর সাথে যোগদেবার ঘোষনা দেন। বাবুল নির্বাচন করার ঘোষনা দেবার পর সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ক্ষোভপ্রকাশ করেন। এসময় তিনি সদরপুরের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের সামনে বাবুলকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেন এবং জানান, বাবুল যাতে কোন এজেন্ট দিতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো বলেন, এটি শফি কাজীর (কাজী শফিকুর রহমান) নির্বাচন নয়, এটি এখন আমার নির্বাচন। আপনারা আমাকে শফি কাজী মনে করে ভোট দেবেন। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে তোলপাড় শুরু হয়। সংসদ সদস্য কতৃক প্রাননাশের হুমকির অভিযোগ এনে এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে নির্বাচনের দুইদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করেন শহিদুল ইসলাম বাবুল। সংসদ সদস্যের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে তাকে শোকজ করে নির্বাচন কমিশন। এসব বিষয় নিয়ে দুইপক্ষের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোটের দিন সদরপুরের ৬৮টি কেন্দ্রেই ছিল টানটান উত্তেজনা। তবে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা ভোট কারচুপির ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষনায় দেখা যায় সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল (আনারস প্রতিক) পেয়েছেন ৪০ হাজার ৩৩৩ ভোট। আর দুইবারের চেয়ারম্যান ও সদরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমান (মোটর সাইকেল প্রতিক) পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৫০৮ ভোট। ফলে দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের জাদরেল নেতাকে হারিয়ে চমক দেখান যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল।

%d