মধুখালীতে প্রতিমার গায়ে আগুন দেবার প্রমান পায়নি তদন্ত কমিটি

বিশেষ প্রতিবেদক। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শ্রমিকদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শেষে ঘটনার ২০ দিন পর তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ১২ মে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনাকালে শতাধিক ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। তাদের বক্তব্যে এ ঘটনার সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ শতাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক বলেন, ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। তবে যেহেতু এটি একটি আদালতে বিচারাধীন বিষয় তাই এ ব্যাপারে আমরা বেশি কিছু বলতে পারছিনা। তিনি বলেন, এ হত্যাকান্ডের সাথে জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের সম্পৃক্ততা ছিলো। ঘটনাস্থলের বিভিন্ন ভিকটিমদের বক্তব্যে পাওয়া গেছে। তবে মন্দিরে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে আগুন লাগানোর সাথে দুই সহোদর জড়িত কিনা সে বিষয়ে কারো কোন বক্তব্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মন্দিরে কে আগুন দিয়েছে সেটি খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। দুই সহোদর কিংবা অন্য কোন শ্রমিক আগুন লাগিয়েছে কিনা সেবিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কারো কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, মন্দিরে আগুন কে বা কারা দিয়েছে সে বিষয়ে কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অনেকগুলো অবজারভেশন দিয়েছে। এসবস্থানে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাতে সিসি ক্যামেরা থাকে এবং অগ্নিনির্বাপকের যাতে ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এ ধরণের কোন উন্নয়ন কর্মকা- যাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে কারো নিকট থেকে কোন প্রমাণস্বরুপ বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল রাতে মধুখালী উপজেলার পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে আপন সহোদর দুই নির্মাণ শ্রমিক আরশাদুল খান (১৯) ও আশরাফুল খানকে (১৫) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে একটি মন্দিরের প্রতিমার কাপড়ে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে জড়িতরা। এ ঘটনায় আরো কয়েকজন শ্রমিক ও পুলিশ আহত হন। এ ঘটনায় গত ২১ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৫ ও ৪৩ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিও প্রকাশের পর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও মেম্বার অজিত বিশ্বাস গা ঢাকা দেন। ঘটনার পর (২৬ এপ্রিল) রাতে পঞ্চপল্লীর ঘটনা পরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার হত্যাকান্ড ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়ে ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপনসহ ইউপি সদস্য অজিত মন্ডলকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করার জন্য এয়ারপোর্ট-বন্দর এবং বর্ডারে সতর্কতা জারি করা হয়।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলীকে প্রধান করে প্রথমে হত্যাকান্ডের তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সাত সদস্যে উন্নীত করে তদন্ত কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শেষে ঘটনার ২৪ দিন পর তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলী গত ৭ মে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পঞ্চপল্লী গ্রামের হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্থানীয় থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ১২ মে পর্যন্তু ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই ভাইকে হত্যার ঘটনায় নিহত দুই সহোদর আশরাফুল খান (২০) ও আসাদুল খানের (১৮) বাবা মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের মো. শাহজাহান খান (৪৬) হত্যা মামলা করেন। মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মন্দিরের পূজারী ডুমাইনের কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ চন্দ্র মন্ডলের স্ত্রী তপতী রানী মন্ডল (৪৭) দ্বিতীয় মামলা করেন। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের আহত করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তৃতীয় মামলাটি করেন মধুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শংকর বালা। তবে চেয়ারম্যান-মেম্বারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১২ মে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন জানান, পঞ্চপল্লীর ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় রবিবার পর্যন্ত মোট ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

%d